কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা ২৫ টন ওজনের মৃত তিমিটি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন বলছে, এটি জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা গেছে। তিমিটির লেজ পচে গেছে। গন্ধ বের হচ্ছিল। তাই নমুনা সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরওয়ার শামীম।
তিনি বলেন, ‘বালিয়াড়িতে আটকে পড়া তিমিটি বিশাল আকৃতির হওয়ায় কোনোভাবে অন্য কোথাও সরানো যায়নি। আর মৃত তিমি থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ক্রেন দিয়ে বালিয়াড়িতে ১০ থেকে ১২ ফুট গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।’
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দরিয়ানগর পয়েন্টে ভেসে ওঠে বিশাল আকৃতির একটি তিমি। ভাটার কারণে তিমিটি পানিতে ভেসে চলে যায় হিমছড়ি পয়েন্টে। উপকূল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে পানিতে ভাসে মরা তিমিটি। তিমির গায়ে প্যাঁচানো জাল আর শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন।
তিমিটি ১০ ঘণ্টা ভেসে থাকার পর রাত ১০টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে এসে আটকা পড়ে। এ সময় তিমিটি দেখতে ভিড় লেগে যায় উৎসুক মানুষের পাশাপাশি পর্যটকদেরও। দেখার পাশাপাশি তারা ছবিও তোলেন।
তাফিয়া নামে এক পর্যটক বলেন, ‘দেশের বাইরে ছিলাম। দুই বছর পর দেশে ফিরেছি। বাবার সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছি। হোটেলে রাতের খাবার শেষে সৈকতে হাঁটতে গিয়ে মানুষজনের ভিড় দেখি। কাছে গিয়ে দেখি বিশাল আকৃতির একটি তিমি। যা থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তিমির গায়ে জাল প্যাঁচানো ছিল। মনে হয়েছে, জালে আটকে তিমিটি মারা গেছে। এই সামুদ্রিক প্রাণী যেটি আমাদের উপকার করে থাকে, তাকে এভাবে মেরে ফেলাটা উচিত হয়নি। খুবই খারাপ লাগছে।’
লাবু নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘তিমি ভেসে উঠেছে শুনে অনেক দূর থেকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে চলে এলাম। সাধারণত বই কিংবা টেলিভিশনে তিমি দেখেছি, কিন্তু এই প্রথম আমি আর আমার মেয়েরা সরাসরি তিমি দেখেছি। তিমিটি অনেক বড় ছিল। যা দেখতে বিমানের মতো লাগছিল।’
দরিয়ানগর পয়েন্টে ভেসে ওঠার পর মঙ্গলবার বিকালে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ড্রোনের মাধ্যমে তিমিটির ছবি ও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। কলাতলী পয়েন্টে ভেসে আসার পর তারা এটির নমুনা সংগ্রহ করেন।
সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিমিটির লেজের অংশ পচে গেছে। আর পরিমাপ করার পর দেখা গেছে তিমিটি ৪০ ফুটের বেশি লম্বা। তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, জেলেদের জালে আটকা পড়ে এটির মৃত্যু হয়েছে।‘
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মোহাম্মদ বেলাল হায়দর বলেন, ‘ভেসে আসা মৃত তিমি ব্রাইডস জাতের। এর বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপেট্রা ইডিনি। এর আগে ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল দুটি তিমি হিমছড়ির ঠিক একই পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। যে দুটি তিমি গত বছর ভেসে এসেছিল, সেগুলোও বেলিনিওপেট্রা ইডিনি প্রজাতির তিমি ছিল। আমরা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলাম। এ প্রজাতির তিমির দাঁত নেই। মুখের মধ্যে চিরুনির মতো একটি অংশ দিয়ে খাবার প্রক্রিয়াজাত করে।’
তিনি বলেন, ‘তিমিটি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। ধারণা করছি, বেশ কিছুদিন আগেই গভীর সমুদ্রে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। এটির শরীরে জালের বিশাল রশি পেঁচিয়ে আছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছ ধরার বিশাল জালে আটকা পড়ে এবং গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে তিমিটি মারা গেছে।’
পাঠকের মতামত